আচ্ছা, ভাবুন তো, আপনি একটা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গেছেন। ইন্টারভিউয়ার আপনাকে জিজ্ঞেস করলো, "আপনি সরকারি চাকরি নাকি প্রাইভেট, কোনটা বেশি পছন্দ করেন?" অনেকেই হয়তো একটু দ্বিধায় পড়ে যাবেন, তাই না? আসলে, এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটা সহজ নয়। কারণ, সরকারি বা রাজস্ব খাত (Revenue Sector) আর স্বায়ত্তশাসিত (Autonomous) চাকরির মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। কোনটা আপনার জন্য ভালো, সেটা আপনার নিজের পছন্দ, দক্ষতা আর লক্ষ্যের ওপর নির্ভর করে।
এই ব্লগ পোষ্টে আমরা রাজস্ব খাত আর স্বায়ত্তশাসিত চাকরির মধ্যেকার পার্থক্যগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি, এই আলোচনা আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।
রাজস্ব খাত ও স্বায়ত্তশাসিত চাকরির মধ্যে পার্থক্য: কোনটা আপনার জন্য সেরা?
১. ভূমিকা: রাজস্ব খাত ও স্বায়ত্তশাসিত চাকরি – একটা ওভারভিউ
এই ব্লগ পোষ্টে আমরা রাজস্ব খাত (Revenue Sector) এবং স্বায়ত্তশাসিত (Autonomous) চাকরি নিয়ে আলোচনা করব। আমরা দেখব এই দুই ধরনের চাকরির মধ্যে আসলে কী কী পার্থক্য আছে, কোনটাতে কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়, আর আপনার জন্য কোনটা সবচেয়ে ভালো হবে।
রাজস্ব খাত বলতে আমরা সাধারণত বুঝি সরকারের অধীনে যে চাকরিগুলো আছে, যেমন সরকারি স্কুল শিক্ষক, সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার, বা সরকারি অফিসের কর্মকর্তা। এই চাকরিগুলোতে সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং নিয়মকানুনগুলোও সরকার নির্ধারণ করে দেয়।
অন্যদিকে, স্বায়ত্তশাসিত চাকরি হলো সেই চাকরিগুলো, যেগুলো কোনো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অধীনে থাকে। যেমন বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক, অথবা কোনো কর্পোরেশন। এই প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মতো করে চলে, এদের নিজস্ব পরিচালনা পর্ষদ থাকে এবং তারা তাদের কর্মীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা নিজেরাই ঠিক করে।
এই দুই ধরনের চাকরি নিয়ে আলোচনা করা দরকার, কারণ অনেকেই ক্যারিয়ার শুরু করার আগে এই বিষয়ে একটা স্পষ্ট ধারণা পেতে চান। কোন চাকরিতে বেশি নিরাপত্তা, কোনটাতে বেশি স্বাধীনতা, আর কোনটাতে উন্নতির সুযোগ বেশি – এই সব কিছু জেনেই তো একজন চাকরিপ্রার্থী সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, তাই না?
২. রাজস্ব খাত: খুঁটিনাটি
২.১ রাজস্ব খাত আসলে কী?
রাজস্ব খাত হলো সরকারের বিভিন্ন বিভাগ এবং মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা চাকরিগুলো। এই খাতের মূল কাজ হলো সরকারি নীতি ও কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়ন করা এবং জনগণের কাছে সরকারি সেবা পৌঁছে দেওয়া।
রাজস্ব খাতের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
- সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ: এই খাতের সবকিছু সরকারের নিয়ম অনুযায়ী চলে।
- নির্দিষ্ট নিয়মকানুন: এখানে কাজ করার জন্য সুনির্দিষ্ট নিয়মকানুন আছে, যেগুলো সবাইকে মেনে চলতে হয়।
- নিরাপত্তা: এই চাকরিতে সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তার একটা বিষয় থাকে।
উদাহরণস্বরূপ, সরকারি স্কুল শিক্ষক, সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার, সরকারি কলেজের অধ্যাপক, জেলা প্রশাসক (DC) অফিসের কর্মকর্তা, পুলিশ কর্মকর্তা – এরা সবাই রাজস্ব খাতের অংশ।
২.২ রাজস্ব খাতের কাজের ধরন
রাজস্ব খাতে কাজের ধরন বিভিন্ন হতে পারে, এটা নির্ভর করে আপনি কোন বিভাগে কাজ করছেন তার ওপর। কিছু সাধারণ কাজের মধ্যে রয়েছে:
- প্রশাসনিক কাজ: ফাইলপত্র সামলানো, হিসাব রাখা, ইত্যাদি।
- নীতি তৈরি ও বাস্তবায়ন: সরকারের নীতি তৈরি এবং সেগুলো জনগণের মধ্যে বাস্তবায়ন করা।
- জনগণের সেবা: সরাসরি জনগণের সাথে যোগাযোগ করে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা দেওয়া।
এই কাজের কিছু সুবিধা হলো:
- চাকরির নিরাপত্তা: সাধারণত চাকরি সহজে যায় না।
- সামাজিক মর্যাদা: সরকারি চাকরিকে সমাজে সম্মানজনক হিসেবে দেখা হয়।
- নিশ্চিত বেতন: প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সময়ে বেতন পাওয়া যায়।
অন্যদিকে, কিছু অসুবিধাও আছে:
- বদলি: চাকরির প্রয়োজনে দেশের যেকোনো জায়গায় বদলি হতে হতে পারে।
- কাজের চাপ: অনেক সময় কাজের চাপ বেশি থাকে।
- নিয়মকানুন: অনেক নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়, যা অনেক সময় বিরক্তিকর লাগতে পারে।
বর্তমানে, রাজস্ব খাতে চাকরির চাহিদা বেশ ভালো। প্রতি বছর বিসিএস (BCS) পরীক্ষার মাধ্যমে প্রচুর লোক এই খাতে যোগ দেয়। এছাড়াও, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমেও অনেকে রাজস্ব খাতে চাকরি পান।
২.৩ রাজস্ব খাতের সুযোগ-সুবিধা
রাজস্ব খাতে সুযোগ-সুবিধাগুলো বেশ আকর্ষণীয়। নিচে কয়েকটি প্রধান সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আলোচনা করা হলো:
- বেতন কাঠামো: রাজস্ব খাতে বেতন কাঠামো সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হয় এবং নিয়মিতভাবে বেতন বৃদ্ধি পায়।
- ভাতা ও সুবিধা: এখানে পেনশন, গ্র্যাচুয়েটি, চিকিৎসা ভাতা, আবাসন সুবিধা, শিক্ষা ভাতা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা পাওয়া যায়।
- চাকরির নিরাপত্তা: এই খাতে চাকরির নিরাপত্তা অনেক বেশি। সাধারণত খুব গুরুতর কোনো কারণ ছাড়া চাকরি যায় না।
- পদোন্নতি: রাজস্ব খাতে পদোন্নতির সুযোগ আছে। সময় এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে উপরের পদে যাওয়ার সুযোগ থাকে।
- আবাসন: অনেক সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সরকার আবাসন সুবিধা দিয়ে থাকে।
- চিকিৎসা: সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ থাকে।
- শিক্ষাভাতা: সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য সরকার শিক্ষাভাতা দিয়ে থাকে।
৩. স্বায়ত্তশাসিত চাকরি: সুযোগ ও সম্ভাবনা
৩.১ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কী?
স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হলো সেই সব প্রতিষ্ঠান, যেগুলো নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিতে পারে। এদের ওপর সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এই প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত একটি পরিচালনা পর্ষদ (Board of Directors) দ্বারা পরিচালিত হয়।
স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
- নিজস্ব পরিচালনা পর্ষদ: এদের নিজেদের একটি পরিচালনা পর্ষদ থাকে, যারা প্রতিষ্ঠানের নীতি নির্ধারণ করে।
- কাজের স্বাধীনতা: এরা নিজেদের মতো করে কাজ করতে পারে, সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ কম থাকে।
- আর্থিক স্বাধীনতা: নিজেদের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিজেরাই রাখে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী খরচ করতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, বিশ্ববিদ্যালয়, যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক, যেমন সোনালী ব্যাংক বা রূপালী ব্যাংক, এবং কিছু কর্পোরেশন, যেমন বেক্সিমকো বা স্কয়ার – এগুলো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ।
৩.২ স্বায়ত্তশাসিত চাকরির কাজের ধরন
স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কাজের ধরন বিভিন্ন হতে পারে। এটা নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানটি কী ধরনের কাজ করে তার ওপর। কিছু সাধারণ কাজের মধ্যে রয়েছে:
- গবেষণা ও উন্নয়ন: নতুন কিছু আবিষ্কার করা বা পুরনো জিনিসকে আরও উন্নত করা।
- ব্যবস্থাপনা: প্রতিষ্ঠানের কাজকর্ম পরিচালনা করা এবং কর্মীদের দেখাশোনা করা।
- অর্থ ও হিসাব: প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখা এবং আর্থিক পরিকল্পনা করা।
এই কাজের কিছু সুবিধা হলো:
- কাজের স্বাধীনতা: নিজের মতো করে কাজ করার সুযোগ থাকে।
- সৃজনশীলতার সুযোগ: নতুন কিছু করার এবং নিজের আইডিয়া কাজে লাগানোর সুযোগ পাওয়া যায়।
- ভালো বেতন: সাধারণত এই চাকরিগুলোতে বেতন ভালো হয়।
অন্যদিকে, কিছু অসুবিধাও আছে:
- চাকরির নিরাপত্তা: সরকারি চাকরির মতো নিরাপত্তা নাও থাকতে পারে।
- কাজের চাপ: অনেক সময় কাজের চাপ বেশি থাকে এবং ডেডলাইন (Deadline) মেনে কাজ করতে হয়।
- প্রতিযোগিতা: ভালো পদের জন্য অনেক বেশি প্রতিযোগিতা থাকে।
এই ধরনের প্রতিষ্ঠানে কাজের পরিবেশ সাধারণত বেশ ভালো হয়। এখানে কর্মীদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করার সুযোগ থাকে।
৩.৩ স্বায়ত্তশাসিত চাকরির সুযোগ-সুবিধা
স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে সুযোগ-সুবিধাগুলো বেশ আকর্ষণীয়। নিচে কয়েকটি প্রধান সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আলোচনা করা হলো:
- বেতন কাঠামো: স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে বেতন কাঠামো সাধারণত সরকারি চাকরির চেয়ে ভালো হয়।
- অন্যান্য সুবিধা: এখানে প্রভিডেন্ট ফান্ড (Provident Fund), গ্র্যাচুয়েটি (Gratuity), ইনস্যুরেন্স (Insurance), চিকিৎসা ভাতা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা পাওয়া যায়।
- কাজের স্বাধীনতা: এই চাকরিতে কাজের অনেক স্বাধীনতা থাকে। আপনি নিজের আইডিয়া অনুযায়ী কাজ করতে পারেন।
- সৃজনশীলতার সুযোগ: স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নতুন কিছু করার এবং নিজের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগানোর অনেক সুযোগ থাকে।
- ক্যারিয়ার গ্রোথ: এখানে ক্যারিয়ারের উন্নতির সম্ভাবনা অনেক বেশি। আপনি নিজের দক্ষতা দিয়ে দ্রুত উপরের পদে যেতে পারেন।
৪. পার্থক্য: রাজস্ব খাত বনাম স্বায়ত্তশাসিত চাকরি
রাজস্ব খাত (Revenue Sector) এবং স্বায়ত্তশাসিত (Autonomous) চাকরির মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। এই পার্থক্যগুলো নিয়ন্ত্রণ, বেতন, সুযোগ-সুবিধা, কাজের পরিবেশ এবং সংস্কৃতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। নিচে এই বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
৪.১ নিয়ন্ত্রণের পার্থক্য
রাজস্ব খাতে সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ থাকে। এখানে সবকিছু সরকারের নিয়ম অনুযায়ী চলে। অন্যদিকে, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব পরিচালনা পর্ষদ থাকে এবং তারা নিজেদের মতো করে কাজ করে।
এই নিয়ন্ত্রণের পার্থক্য কর্মীদের কাজের ওপর অনেক প্রভাব ফেলে। রাজস্ব খাতে কর্মীদের সরকারের নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়, তাই তাদের কাজের স্বাধীনতা কম থাকে। কিন্তু স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মীরা অনেক বেশি স্বাধীনতা ভোগ করে এবং নিজেদের আইডিয়া কাজে লাগানোর সুযোগ পায়।
নিচের টেবিলটি দেখলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে:
বৈশিষ্ট্য | রাজস্ব খাত | স্বায়ত্তশাসিত চাকরি |
---|---|---|
নিয়ন্ত্রণ | সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে | নিজস্ব পরিচালনা পর্ষদের অধীনে |
কাজের স্বাধীনতা | কম | বেশি |
জবাবদিহিতা | সরকারের কাছে | পরিচালনা পর্ষদের কাছে |
৪.২ বেতন ও সুযোগ-সুবিধার পার্থক্য
রাজস্ব খাতে সরকার নির্ধারিত বেতন কাঠামো অনুসরণ করা হয়। এখানে বেতন সাধারণত শুরুতে কম থাকে, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে বাড়তে থাকে। অন্যদিকে, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব বেতন কাঠামো থাকে এবং এখানে বেতন সাধারণত সরকারি চাকরির চেয়ে বেশি হয়।
অন্যান্য সুবিধাগুলোর ক্ষেত্রেও পার্থক্য দেখা যায়। রাজস্ব খাতে পেনশন এবং গ্র্যাচুয়েটির সুবিধা থাকে, যা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নাও থাকতে পারে। তবে, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে প্রভিডেন্ট ফান্ড, ইনস্যুরেন্স এবং অন্যান্য আর্থিক সুবিধা বেশি থাকে।
আর্থিক নিরাপত্তার দিক থেকে দেখতে গেলে, রাজস্ব খাত তুলনামূলকভাবে বেশি নিরাপদ। কারণ, এখানে চাকরি হারানোর ঝুঁকি কম থাকে।
৪.৩ কাজের পরিবেশ ও সংস্কৃতির পার্থক্য
রাজস্ব খাতে কাজের পরিবেশ সাধারণত নিয়মনিষ্ঠ এবং আনুষ্ঠানিক হয়। এখানে সবকিছু একটা নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে চলে এবং কর্মীদের সময় মেনে অফিসে আসতে হয়। অন্যদিকে, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কাজের পরিবেশ নমনীয় এবং উদ্ভাবনী হয়। এখানে কর্মীদের নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয় এবং টিম ওয়ার্কের ওপর জোর দেওয়া হয়।
কর্মীদের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও পার্থক্য দেখা যায়। রাজস্ব খাতে সাধারণত সিনিয়র কর্মকর্তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হয় এবং তাদের নির্দেশ মেনে চলতে হয়। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দেখা যায় এবং সবাই মিলেমিশে কাজ করে।
উদাহরণস্বরূপ, একটি সরকারি অফিসের রুটিন কাজ এবং একটি বেসরকারি ব্যাংকের প্রোজেক্টভিত্তিক কাজের মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকে। সরকারি অফিসে সাধারণত একই ধরনের কাজ বারবার করতে হয়, যেখানে বেসরকারি ব্যাংকে নতুন নতুন প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ করার সুযোগ থাকে।
৫. আপনার জন্য কোনটা ভালো?
রাজস্ব খাত (Revenue Sector) আর স্বায়ত্তশাসিত (Autonomous) চাকরি – দুটোই কিন্তু দারুণ। তবে আপনার জন্য কোনটা ভালো, সেটা নির্ভর করে আপনার নিজের কিছু পছন্দের ওপর। চলুন, দেখি কোন পরিস্থিতিতে কোন চাকরিটা আপনার জন্য সেরা হতে পারে:
৫.১ নিজের আগ্রহ ও লক্ষ্যের সাথে মিলিয়ে দেখা
- যদি আপনি স্থিতিশীলতা (Stability) আর নিরাপত্তা (Security) চান: তাহলে রাজস্ব খাত আপনার জন্য ভালো। এখানে চাকরি সহজে যায় না, বেতনও নিয়মিত পাওয়া যায়। অনেকটা যেন "টেনশন ফ্রি" জীবন!
- যদি আপনি স্বাধীনতা (Freedom) আর নতুন কিছু করার সুযোগ (Opportunity) চান: তাহলে স্বায়ত্তশাসিত চাকরি আপনার জন্য পারফেক্ট। এখানে আপনি নিজের আইডিয়া কাজে লাগাতে পারবেন, নতুন কিছু শিখতে পারবেন এবং দ্রুত উন্নতি করার সুযোগও পাবেন।
৫.২ কিছু বাস্তব উদাহরণ
- যারা রাজস্ব খাতে সফল: অনেক সরকারি কর্মকর্তা আছেন, যারা জনগণের সেবা করে দারুণ খুশি। তারা দেশের জন্য কাজ করতে চান এবং তাদের কাজের মাধ্যমে মানুষের জীবনকে উন্নত করতে চান। যেমন, একজন বিসিএস (BCS) ক্যাডার হয়তো গরিব মানুষের জন্য শিক্ষা বা স্বাস্থ্যের উন্নয়নে কাজ করছেন।
- যারা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে ভালো করছেন: আবার এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা বেসরকারি ব্যাংক বা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে কাজ করে নিজেদের ক্যারিয়ারকে অনেক দূরে নিয়ে গেছেন। তারা নতুন নতুন টেকনোলজি (Technology) নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসেন এবং নিজেদের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন কিছু তৈরি করতে চান।
এই উদাহরণগুলো থেকে আপনি হয়তো কিছুটা ধারণা পেয়েছেন যে, কোন পথে গেলে আপনি সফল হতে পারেন।
৫.৩ সিদ্ধান্ত নেওয়ার টিপস
- নিজের দক্ষতা (Skills) আর দুর্বলতা (Weakness) কিভাবে মূল্যায়ন করবেন: প্রথমে একটা তালিকা তৈরি করুন। আপনার কী কী ভালো লাগে, কোন কাজে আপনি দক্ষ, আর কোন কাজগুলো করতে আপনার একদম ভালো লাগে না – এগুলো লিখে ফেলুন।
- ক্যারিয়ারের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য কিভাবে নির্ধারণ করবেন: ভাবুন, আপনি আগামী ৫ বা ১০ বছরে নিজেকে কোথায় দেখতে চান। আপনি কি একজন বড় সরকারি কর্মকর্তা হতে চান, নাকি একজন সফল ব্যবসায়ী হতে চান? আপনার লক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে আপনার ক্যরিয়ারের পথ বেছে নিন।
- অভিজ্ঞদের পরামর্শ আর মেন্টরশিপের গুরুত্ব: যারা অলরেডি (Already) এই পথে হেঁটেছেন, তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিন। তাদের অভিজ্ঞতা থেকে আপনি অনেক কিছু শিখতে পারবেন। একজন ভালো মেন্টর (Mentor) আপনাকে সঠিক পথ দেখাতে পারেন।
৬. উপসংহার
তাহলে, রাজস্ব খাত (Revenue Sector) আর স্বায়ত্তশাসিত (Autonomous) চাকরির মধ্যে পার্থক্যগুলো নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন। একদিকে যেমন সরকারি চাকরির নিরাপত্তা আর সুযোগ-সুবিধা আছে, তেমনি অন্যদিকে স্বায়ত্তশাসিত চাকরিতে কাজের স্বাধীনতা আর ভালো বেতনের হাতছানি।
মূল পার্থক্যগুলো আরেকবার মনে করিয়ে দেই:
- নিয়ন্ত্রণ: রাজস্ব খাতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ বেশি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কম।
- বেতন ও সুযোগ-সুবিধা: স্বায়ত্তশাসিত চাকরিতে বেতন বেশি, তবে সরকারি চাকরিতে পেনশন আর গ্র্যাচুয়েটির সুবিধা আছে।
- কাজের পরিবেশ: সরকারি চাকরিতে নিয়মকানুন বেশি, স্বায়ত্তশাসিত চাকরিতে স্বাধীনতা বেশি।
সবশেষে, আপনার জন্য কোনটা ভালো, সেটা আপনাকেই বেছে নিতে হবে। নিজেকে জানুন, বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নিন। আপনার কিসের প্রতি আগ্রহ, সেটা খুঁজে বের করুন। সেই অনুযায়ী, নিজের ক্যরিয়ারের পথ বাছুন। শুভকামনা!