বিদেশে মাস্টার্স করতে কত টাকা লাগে? জানুন আসল খরচ!

বিদেশে মাস্টার্স করতে কত টাকা লাগে?

স্বপ্ন দেখুন বিশ্বজুড়ে, মাস্টার্স করুন নিজের পছন্দের বিষয়ে! কিন্তু বিদেশে মাস্টার্স করতে গেলে কেমন খরচ হতে পারে, তা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে। আসুন, আজকের ব্লগ পোস্টে আমরা এই বিষয়টি নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করি। আপনার স্বপ্নের পথে কত খরচ হতে পারে, তার একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব।

Table of contents

বিদেশে মাস্টার্স করার খরচ: একটি সার্বিক ধারণা

বিদেশে মাস্টার্স করার খরচ কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। এর মধ্যে প্রধান বিষয়গুলো হলো:

  • বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি
  • থাকা-খাওয়ার খরচ
  • ভিসা এবং অন্যান্য প্রশাসনিক খরচ
  • যাতায়াত খরচ
  • ব্যক্তিগত খরচ

এই খরচগুলো দেশ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং আপনার জীবনযাত্রার ধরনের ওপর ভিত্তি করে ভিন্ন হতে পারে।

টিউশন ফি: কোথায় কত খরচ?

বিদেশে মাস্টার্স করার ক্ষেত্রে টিউশন ফি একটি বড় বিষয়। বিভিন্ন দেশে টিউশন ফির ভিন্নতা দেখা যায়। নিচে কয়েকটি জনপ্রিয় দেশের টিউশন ফি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (USA)

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাস্টার্স প্রোগ্রামের টিউশন ফি সাধারণত বছরে $২০,০০০ থেকে $৫০,০০০ পর্যন্ত হতে পারে। কিছু স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এই খরচ আরও বেশি হতে পারে।

যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে মাস্টার্স প্রোগ্রামের টিউশন ফি বছরে £১২,০০০ থেকে £৩০,০০০ পর্যন্ত হতে পারে। লন্ডনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি।

অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়ায় মাস্টার্স প্রোগ্রামের টিউশন ফি বছরে AUD$৩০,০০০ থেকে AUD$৪৫,০০০ পর্যন্ত হতে পারে।

কানাডা

কানাডায় মাস্টার্স প্রোগ্রামের টিউশন ফি বছরে CAD$২০,০০০ থেকে CAD$৪০,০০০ পর্যন্ত হতে পারে।

জার্মানি

জার্মানিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি সাধারণত অনেক কম, প্রায় বিনামূল্যে পড়া যায়। তবে কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি বছরে €৮,০০০ থেকে €২০,০০০ পর্যন্ত হতে পারে।

থাকা-খাওয়ার খরচ: জীবনযাত্রার মান

বিদেশে থাকার খরচ আপনার জীবনযাত্রার মানের ওপর নির্ভর করে। নিচে কয়েকটি দেশের থাকা-খাওয়ার খরচের একটি ধারণা দেওয়া হলো:

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (USA)

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা-খাওয়ার খরচ মাসে প্রায় $১,০০০ থেকে $২,৫০০ পর্যন্ত হতে পারে। এটি শহরের ওপর নির্ভর করে, যেমন নিউ ইয়র্ক বা ক্যালিফোর্নিয়ার মতো শহরে খরচ বেশি।

যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে থাকা-খাওয়ার খরচ মাসে প্রায় £৮০০ থেকে £১,৫০০ পর্যন্ত হতে পারে। লন্ডনে এই খরচ আরও বেশি হতে পারে।

অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়ায় থাকা-খাওয়ার খরচ মাসে প্রায় AUD$১,২০০ থেকে AUD$২,০০০ পর্যন্ত হতে পারে। সিডনি বা মেলবোর্নের মতো শহরে খরচ বেশি।

কানাডা

কানাডায় থাকা-খাওয়ার খরচ মাসে প্রায় CAD$১,০০০ থেকে CAD$২,০০০ পর্যন্ত হতে পারে। টরন্টো বা ভ্যাঙ্কুভারে খরচ বেশি।

জার্মানি

জার্মানিতে থাকা-খাওয়ার খরচ মাসে প্রায় €৭০০ থেকে €১,২০০ পর্যন্ত হতে পারে। মিউনিখ বা ফ্রাঙ্কফুর্টের মতো শহরে খরচ বেশি।

ভিসা এবং অন্যান্য প্রশাসনিক খরচ

বিদেশে পড়াশোনা করতে যাওয়ার আগে ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়। ভিসার আবেদন ফি এবং অন্যান্য প্রশাসনিক খরচও আপনার বাজেটে যোগ করতে হবে। বিভিন্ন দেশের ভিসার খরচ নিচে দেওয়া হলো:

  • মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: $১৬০ (ভিসা আবেদন ফি)
  • যুক্তরাজ্য: £৩৪8 (স্টুডেন্ট ভিসা ফি)
  • অস্ট্রেলিয়া: AUD$৬৫০ (স্টুডেন্ট ভিসা ফি)
  • কানাডা: CAD$১৫০ (স্টাডি পারমিট ফি)
  • জার্মানি: €৭৫ (ভিসা আবেদন ফি)

যাতায়াত খরচ

বিদেশে পড়তে যাওয়ার সময় প্লেনের টিকিট এবং সেখানে পৌঁছানোর পরের যাতায়াত খরচও হিসাব করতে হবে। প্লেনের টিকিটের দাম সাধারণত $৫০০ থেকে $২,০০০ পর্যন্ত হতে পারে, যা আপনার গন্তব্য এবং সময়ের ওপর নির্ভর করে।

বৃত্তি (Scholarship) পাওয়ার সুযোগ

বিদেশে মাস্টার্স করার খরচ কমাতে বৃত্তির (Scholarship) বিকল্প নেই। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি-বেসরকারি সংস্থা বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের বৃত্তি দিয়ে থাকে। কিছু জনপ্রিয় বৃত্তি হলো:

  • ফুলব্রাইট স্কলারশিপ (Fulbright Scholarship)
  • চিভনিং স্কলারশিপ (Chevening Scholarship)
  • ইরাসমাস মুন্ডুস স্কলারশিপ (Erasmus Mundus Scholarship)
  • অস্ট্রেলিয়ান গভর্নমেন্ট রিসার্চ ট্রেনিং প্রোগ্রাম (Australian Government Research Training Program)
  • কানাডিয়ান কমনওয়েলথ স্কলারশিপ প্রোগ্রাম (Canadian Commonwealth Scholarship Program)

বিদেশে মাস্টার্স করতে কত টাকা লাগে তার একটি সম্ভাব্য হিসাব

একটি সাধারণ হিসাব দেওয়ার চেষ্টা করছি। এই হিসাবটি একটি উদাহরণ মাত্র, প্রকৃত খরচ ভিন্ন হতে পারে।

প্রথম বছর

  • টিউশন ফি: $২০,০০০ – $৩০,০০০
  • থাকা-খাওয়া: $১২,০০০ – $১৮,০০০
  • ভিসা এবং অন্যান্য খরচ: $৫০০ – $১,০০০
  • যাতায়াত খরচ: $১,০০০ – $২,০০০
  • মোট খরচ: $৩৩,৫০০ – $৫১,০০০

দ্বিতীয় বছর

  • টিউশন ফি: $২০,০০০ – $৩০,০০০
  • থাকা-খাওয়া: $১২,০০০ – $১৮,০০০
  • অন্যান্য খরচ: $১,০০০ – $২,০০০
  • মোট খরচ: $৩৩,০০০ – $৫০,০০০

সুতরাং, দুই বছরে আপনার মোট খরচ হতে পারে প্রায় $৬৬,৫০০ থেকে $১,০১,০০০ (প্রায় ৬৭ লক্ষ টাকা থেকে ১ কোটি টাকার বেশি)।

খরচ কমানোর উপায়

বিদেশে মাস্টার্স করার খরচ কমানোর কিছু উপায় নিচে দেওয়া হলো:

  • বৃত্তি (Scholarship) -এর জন্য আবেদন করুন।
  • পার্ট-টাইম চাকরি খুঁজে নিন।
  • কম খরচের শহরে থাকার চেষ্টা করুন।
  • নিজের খাবার নিজে রান্না করুন।
  • পুরোনো বই কিনুন অথবা লাইব্রেরি ব্যবহার করুন।

বিদেশে মাস্টার্স করার জন্য প্রস্তুতি

বিদেশে মাস্টার্স করার জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়। নিচে কিছু টিপস দেওয়া হলো:

  • IELTS/TOEFL-এর জন্য প্রস্তুতি নিন: ভালো স্কোর আপনার সুযোগ বাড়িয়ে দেবে।
  • আবেদনপত্র তৈরি করুন: সময় নিয়ে নিজের প্রোফাইল তৈরি করুন এবং সঠিকভাবে উপস্থাপন করুন।
  • আর্থিক প্রস্তুতি নিন: বৃত্তির জন্য চেষ্টা করুন এবং নিজের সাধ্যের মধ্যে একটি বাজেট তৈরি করুন।
  • ভিসার জন্য আবেদন করুন: সময় মতো ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে আবেদন করুন।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা আপনার জানা উচিত

  • বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন: নিজের বিষয় এবং পছন্দের ওপর ভিত্তি করে বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করুন।
  • আবেদনের সময়সীমা: প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনের সময়সীমা ভিন্ন হয়, তাই আগে থেকে জেনে আবেদন করুন।
  • জীবনযাত্রার প্রস্তুতি: নতুন দেশে থাকার জন্য মানসিক এবং শারীরিকভাবে প্রস্তুতি নিন।

বিদেশে মাস্টার্স করার সুবিধা

বিদেশে মাস্টার্স করার অনেক সুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি হলো:

  • উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা: বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার সুযোগ।
  • সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা: নতুন সংস্কৃতি এবং মানুষের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ।
  • ক্যারিয়ারের সুযোগ: আন্তর্জাতিক বাজারে ভালো চাকরির সুযোগ।
  • ব্যক্তিগত উন্নয়ন: আত্মবিশ্বাস এবং নতুন দক্ষতা অর্জনের সুযোগ।

কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)

১. বিদেশে মাস্টার্স করতে IELTS-এ কত স্কোর লাগে?

বিদেশে মাস্টার্স করতে IELTS-এ সাধারণত ৬.৫ বা তার বেশি স্কোর লাগে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭ বা তার বেশি স্কোরও চাইতে পারে।

২. কোন দেশে মাস্টার্স করা ভালো?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং জার্মানি মাস্টার্সের জন্য খুবই জনপ্রিয়। আপনার বিষয় এবং পছন্দের ওপর নির্ভর করে আপনি একটি দেশ বেছে নিতে পারেন।

৩. বিদেশে মাস্টার্স করার জন্য কি লোন পাওয়া যায়?

হ্যাঁ, অনেক ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিদেশে পড়াশোনার জন্য লোন দিয়ে থাকে।

৪. বিদেশে পার্ট-টাইম চাকরি করে কত টাকা আয় করা যায়?

পার্ট-টাইম চাকরি করে আপনি মাসে $৫০০ থেকে $১,০০০ পর্যন্ত আয় করতে পারেন, যা আপনার থাকা-খাওয়ার খরচ কমাতে সাহায্য করবে।

৫. বিদেশে মাস্টার্স করার পর কি স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ আছে?

কিছু দেশে মাস্টার্স করার পর স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ রয়েছে। তবে এটি দেশের নিয়ম এবং আপনার যোগ্যতার ওপর নির্ভর করে।

৬. স্কলারশিপ পেতে হলে কি কি করতে হবে?

স্কলারশিপ পেতে হলে আপনার ভালো একাডেমিক ফলাফল, শক্তিশালী রেফারেন্স লেটার এবং একটি সুন্দর স্টেটমেন্ট অফ পারপাস (SOP) থাকতে হবে।

৭. বিদেশে পড়াশোনার জন্য কিভাবে প্রস্তুতি শুরু করব?

প্রথমে নিজের পছন্দের বিষয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করুন। তারপর IELTS/TOEFL-এর জন্য প্রস্তুতি নিন এবং বৃত্তির জন্য আবেদন করুন।

৮. বিদেশে মাস্টার্স করতে বয়সের কি কোনো সীমাবদ্ধতা আছে?

সাধারণত বয়সের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই, তবে কিছু স্কলারশিপের ক্ষেত্রে বয়সের সীমা থাকতে পারে।

৯. বিদেশে পড়াশোনার পাশাপাশি কি অন্য কাজ করা যায়?

হ্যাঁ, অনেক দেশে স্টুডেন্ট ভিসায় পড়াশোনার পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কাজ করার অনুমতি থাকে।

১০. বিদেশে মাস্টার্স করার জন্য কোন বিষয়গুলো বেশি জনপ্রিয়?

কম্পিউটার সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং, বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (MBA), ডেটা সায়েন্স এবং পাবলিক হেলথ – এই বিষয়গুলো বর্তমানে খুব জনপ্রিয়।

উপসংহার

বিদেশে মাস্টার্স করা একটি বড় স্বপ্ন। এই স্বপ্ন পূরণের পথে আর্থিক বিষয়গুলো ভালোভাবে জেনে রাখা দরকার। আশা করি, আজকের ব্লগ পোস্টটি আপনাকে বিদেশে মাস্টার্স করার খরচ সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা দিতে পেরেছে। আপনার ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য শুভকামনা! যদি আপনার কোন বিশেষ দেশ বা বিষয় নিয়ে আরও কিছু জানার থাকে, তাহলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনার স্বপ্নের পথে আমরা সবসময় আপনার পাশে আছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *