চাকরির ইন্টারভিউ – শব্দটা শুনলেই কি বুক ধড়ফড় করে ওঠে? মনে হয়, ইশশ, যদি আগে থেকে জানতাম কী প্রশ্ন করবে, তাহলে তো ফাটিয়ে দিতাম! আপনার এই অনুভূতিটা খুবই স্বাভাবিক। কারণ, ইন্টারভিউ মানেই তো একটা অজানা পথের যাত্রা, যেখানে আপনার যোগ্যতা আর ব্যক্তিত্বের পরীক্ষা হয়। কিন্তু ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সঠিক প্রস্তুতি থাকলে এই যাত্রাকে আপনি দারুণ উপভোগ করতে পারবেন। বিশ্বাস করুন, ইন্টারভিউ মানে শুধু কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়া নয়, বরং নিজেকে তুলে ধরার একটা বিশাল সুযোগ।
আজ আমরা এমন কিছু টিপস আর ট্রিকস নিয়ে কথা বলব, যা আপনাকে চাকরির ইন্টারভিউয়ের জন্য একদম নিখুঁতভাবে প্রস্তুত হতে সাহায্য করবে। চলুন, শুরু করা যাক এই দারুণ প্রস্তুতি পর্ব!
ইন্টারভিউয়ের আগে প্রস্তুতি: অর্ধেক যুদ্ধ জেতা!
ইন্টারভিউয়ের আগের প্রস্তুতিটা খুবই জরুরি। এটাকে হালকাভাবে নিলে চলবে না। মনে রাখবেন, ভালোভাবে প্রস্তুতি নিলে আপনার আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যাবে, যা ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে আপনাকে আরও উজ্জ্বল করে তুলবে।
১. কোম্পানি সম্পর্কে জানুন: শুধু নাম নয়, ইতিহাসটাও!
আপনি যে কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছেন, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানা আপনার প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। শুধু কোম্পানির নাম, ঠিকানা জানলে হবে না।
- কোম্পানির মিশন ও ভিশন: তারা কী লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে এবং ভবিষ্যতে কী হতে চায়, তা জানুন।
- পণ্য বা সেবা: কোম্পানি কী ধরনের পণ্য বা সেবা দেয়, সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখুন। সম্ভব হলে তাদের পণ্য ব্যবহার করে দেখুন।
- সাম্প্রতিক খবর: কোম্পানির কোনো নতুন প্রজেক্ট, অর্জন বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ আছে কিনা, তা জেনে নিন। লিংকডইন, কোম্পানির ওয়েবসাইট বা নিউজ পোর্টালগুলো এক্ষেত্রে দারুণ সাহায্য করবে।
- প্রতিযোগী: তাদের প্রধান প্রতিযোগী কারা এবং তাদের থেকে এই কোম্পানি কিভাবে আলাদা, তা বোঝার চেষ্টা করুন।
এই তথ্যগুলো আপনাকে ইন্টারভিউতে প্রাসঙ্গিক উত্তর দিতে এবং আপনার আগ্রহ বোঝাতে সাহায্য করবে। ধরুন, আপনি একটা টেকনোলজি কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিতে গেছেন। যদি তাদের সাম্প্রতিক কোনো প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন নিয়ে কথা বলতে পারেন, তাহলে আপনার প্রতি তাদের ইতিবাচক ধারণা তৈরি হবে।
২. পদের বিবরণ (Job Description) পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়ুন: আপনার রোডম্যাপ!
আবেদন করার সময় নিশ্চয়ই পদের বিবরণটা পড়েছেন, তাই না? ইন্টারভিউয়ের আগে এটা আরও একবার, বরং অনেকবার পড়ুন। প্রতিটি বাক্য, প্রতিটি শব্দ মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
- প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা: এই পদের জন্য কী কী দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছে, তার একটা তালিকা তৈরি করুন।
- আপনার মিলগুলো খুঁজুন: এবার ভাবুন, আপনার কোন কোন দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা এই তালিকার সাথে মেলে। প্রয়োজনে ছোট ছোট উদাহরণ নোট করে রাখুন।
- গ্যাপ থাকলে কী বলবেন: যদি কোনো দক্ষতা বা অভিজ্ঞতা আপনার না থাকে, তাহলে সেটা কিভাবে অর্জন করতে আগ্রহী, তা ভেবে রাখুন।
এই বিশ্লেষণ আপনাকে ইন্টারভিউতে আপনার যোগ্যতা তুলে ধরতে এবং "কেন আপনি এই পদের জন্য সেরা প্রার্থী?" – এই প্রশ্নের উত্তর দিতে সাহায্য করবে।
৩. আপনার সিভি (CV) বা রেজ্যুমে ভালোভাবে পর্যালোচনা করুন: আপনার পরিচয়পত্র!
আপনার সিভিই কিন্তু ইন্টারভিউ বোর্ডের কাছে আপনার প্রথম পরিচয়। তাই ইন্টারভিউতে যাওয়ার আগে আপনার সিভিটা অন্তত দু'বার পড়ুন।
- প্রতিটি পয়েন্ট মনে রাখুন: সিভিতে আপনি যা যা লিখেছেন, তার প্রতিটি পয়েন্ট সম্পর্কে আপনার স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে।
- মিথ্যা তথ্য নয়: সিভিতে কোনো মিথ্যা তথ্য দেবেন না। কারণ ইন্টারভিউতে সেই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আপনি ধরা পড়ে যেতে পারেন।
- পুরনো অভিজ্ঞতা: আপনার পুরনো কাজের অভিজ্ঞতা, দায়িত্ব এবং অর্জনগুলো মনে করে নিন। প্রয়োজনে ছোট নোট করে রাখুন।
অনেক সময় দেখা যায়, প্রার্থী তার সিভিতে যা লিখেছেন, সে সম্পর্কে নিজেই ওয়াকিবহাল নন। এটা কিন্তু আপনার জন্য খুবই খারাপ একটা দিক।
৪. সম্ভাব্য প্রশ্ন ও উত্তর প্রস্তুত করুন: অনুশীলন, অনুশীলন, অনুশীলন!
ইন্টারভিউতে কী ধরনের প্রশ্ন করা হতে পারে, তার একটা ধারণা থাকলে আপনার প্রস্তুতি অনেক সহজ হয়ে যাবে। কিছু সাধারণ প্রশ্ন আছে যা প্রায় সব ইন্টারভিউতেই করা হয়।
ক. সাধারণ প্রশ্নাবলী:
- নিজের সম্পর্কে বলুন (Tell me about yourself): এই প্রশ্নটা প্রায় সব ইন্টারভিউতেই প্রথম প্রশ্ন হিসেবে আসে। এটা আপনার জন্য একটা গোল্ডেন চান্স। নিজের শিক্ষাজীবন, কাজের অভিজ্ঞতা, অর্জন এবং এই পদের জন্য আপনি কেন উপযুক্ত, তা সংক্ষেপে তুলে ধরুন। খুব বেশি ব্যক্তিগত তথ্য না দিয়ে পেশাগত দিকগুলো তুলে ধরা ভালো।
- কেন আপনি এই চাকরিটি চান? (Why do you want this job?): এখানে আপনার আগ্রহ এবং কোম্পানির প্রতি আপনার জ্ঞান প্রকাশ পাবে। কোম্পানির মিশন, ভিশন বা কাজের পরিবেশের সাথে আপনার লক্ষ্যের মিল আছে, এমন কিছু বলুন।
- কেন আমরা আপনাকে নিয়োগ দেব? (Why should we hire you?): এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় আপনার সেরা দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং আপনি কিভাবে কোম্পানির জন্য মূল্যবান সম্পদ হতে পারেন, তা তুলে ধরুন। আপনার ইউনিক সেলিং প্রোপোজিশন (USP) কী, তা বলুন।
- আপনার শক্তি ও দুর্বলতা কী? (What are your strengths and weaknesses?): শক্তির দিকগুলো আত্মবিশ্বাসের সাথে বলুন। দুর্বলতার ক্ষেত্রে এমন কিছু বলুন যা আপনার পেশাগত জীবনের খুব বেশি ক্ষতি করবে না এবং বলুন কিভাবে আপনি সেই দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। যেমন: "আমি মাঝে মাঝে অতিরিক্ত খুঁতখুঁতে হয়ে যাই, কিন্তু এখন আমি সময় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছি।"
- আপনার বেতন প্রত্যাশা কত? (What are your salary expectations?): এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে বাজার সম্পর্কে ধারণা রাখুন। সরাসরি কোনো অঙ্ক না বলে একটা রেঞ্জ বলতে পারেন, অথবা বলতে পারেন যে আপনার মূল লক্ষ্য সুযোগটি অর্জন করা এবং বেতন নিয়ে আলোচনা করা যাবে।
খ. আচরণগত প্রশ্নাবলী (Behavioral Questions):
এগুলো সাধারণত আপনার অতীত অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে করা হয়, যেমন: "এমন একটা পরিস্থিতির কথা বলুন যখন আপনি কোনো কঠিন সমস্যার সমাধান করেছেন।" এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য STAR পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন:
- S (Situation): পরিস্থিতিটা সংক্ষেপে বর্ণনা করুন।
- T (Task): আপনার কাজ বা দায়িত্ব কী ছিল, তা বলুন।
- A (Action): আপনি কী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, তা বিস্তারিত বলুন।
- R (Result): আপনার পদক্ষেপের ফলাফল কী হয়েছিল, তা উল্লেখ করুন।
৫. প্রশ্ন করার জন্য প্রস্তুত থাকুন: আপনার আগ্রহের প্রমাণ!
ইন্টারভিউ শেষে আপনাকে প্রশ্ন করার সুযোগ দেওয়া হবে। এই সুযোগটা কাজে লাগান। প্রশ্ন করা আপনার আগ্রহ আর বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয়।
- কোম্পানির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: "কোম্পানির আগামী ৫ বছরের পরিকল্পনা কী?"
- টিম সম্পর্কে: "আমি যে টিমের অংশ হব, সেই টিমের দৈনন্দিন কাজ কেমন হবে?"
- শিখন ও উন্নয়নের সুযোগ: "এই পদের জন্য কি কোনো প্রশিক্ষণ বা উন্নয়নের সুযোগ আছে?"
- পরবর্তী ধাপ: "ইন্টারভিউয়ের পরবর্তী ধাপ কী এবং কবে নাগাদ আমি জানতে পারব?"
এমন প্রশ্ন করবেন না যার উত্তর আপনি কোম্পানির ওয়েবসাইটেই পেতে পারেন।
৬. পোশাক নির্বাচন ও সাজসজ্জা: প্রথম দেখায় মুগ্ধতা!
পোশাক আপনার ব্যক্তিত্বের প্রতিচ্ছবি। ইন্টারভিউতে আপনার পোশাক মার্জিত ও পরিপাটি হওয়া উচিত।
- ফরমাল পোশাক: ছেলেদের জন্য শার্ট-প্যান্ট, টাই (ঐচ্ছিক), মেয়েদের জন্য সালোয়ার-কামিজ বা শাড়ি/ফরমাল পোশাক।
- রং: হালকা বা নিরপেক্ষ রং যেমন সাদা, নীল, ধূসর বা কালো বেছে নিন।
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: পোশাক অবশ্যই পরিষ্কার এবং ইস্ত্রি করা হতে হবে। জুতো পালিশ করা এবং চুল আঁচড়ানো থাকতে হবে।
- বেশি সাজসজ্জা নয়: মেয়েদের ক্ষেত্রে হালকা মেকআপ এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে সুগন্ধি ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে তা যেন উগ্র না হয়।
মনে রাখবেন, প্রথম দেখায় আপনার পরিপাটি চেহারা একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৭. ইন্টারভিউয়ের স্থান সম্পর্কে জানুন: সময়মতো পৌঁছানোর নিশ্চয়তা!
ইন্টারভিউয়ের অন্তত এক দিন আগে ইন্টারভিউয়ের স্থানটি কোথায়, কিভাবে যাবেন, কতক্ষণ সময় লাগবে – এই সব জেনে নিন। গুগল ম্যাপ ব্যবহার করতে পারেন।
- সময়মতো পৌঁছানো: ইন্টারভিউয়ের অন্তত ১৫-২০ মিনিট আগে পৌঁছানোর চেষ্টা করুন। এতে আপনি মানসিক প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য কিছুটা সময় পাবেন।
- অনলাইন ইন্টারভিউয়ের ক্ষেত্রে: ইন্টারনেট সংযোগ, ল্যাপটপের চার্জ এবং নিরিবিলি পরিবেশ নিশ্চিত করুন।
দেরি করে পৌঁছানো আপনার অপেশাদারিত্বের পরিচয় দেয়।
ইন্টারভিউ চলাকালীন: আত্মবিশ্বাসের সাথে মোকাবিলা!
ইন্টারভিউ রুমে ঢোকার পর থেকে বের হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১. ইতিবাচক শরীরী ভাষা (Body Language): আপনার নীরব ভাষা!
আপনার শরীরী ভাষা আপনার আত্মবিশ্বাস এবং আগ্রহ প্রকাশ করে।
- চোখে চোখ রাখা: ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্যদের চোখে চোখ রেখে কথা বলুন। এটি আপনার আত্মবিশ্বাস বোঝায়।
- সোজা হয়ে বসা: চেয়ারে সোজা হয়ে বসুন, কুঁজো হয়ে নয়।
- হাসি: মুখে হালকা হাসি রাখুন, এটি আপনাকে বন্ধুত্বপূর্ণ দেখাবে।
- হাত মেলানো: শুরুতে অনুমতি নিয়ে হাত মেলাতে পারেন, তবে করমর্দন যেন দৃঢ় হয়।
২. মনোযোগ দিয়ে শুনুন: সঠিক উত্তরের চাবিকাঠি!
ইন্টারভিউয়ারের প্রশ্ন মনোযোগ দিয়ে শুনুন। যদি কোনো প্রশ্ন বুঝতে না পারেন, তাহলে বিনয়ের সাথে আবার জিজ্ঞেস করতে পারেন।
- প্রশ্ন শেষ হওয়ার অপেক্ষা: প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগে উত্তর দেওয়া শুরু করবেন না।
- চিন্তা করে উত্তর দিন: তাড়াহুড়ো না করে একটু সময় নিয়ে চিন্তা করে উত্তর দিন।
৩. সততা ও আত্মবিশ্বাস: আপনার সেরা অস্ত্র!
সততা এবং আত্মবিশ্বাস আপনার সবচেয়ে বড় শক্তি।
- সৎ থাকুন: মিথ্যা বলবেন না। যদি কোনো প্রশ্নের উত্তর না জানেন, তাহলে বিনয়ের সাথে বলুন যে আপনি জানেন না, তবে শিখতে আগ্রহী।
- আত্মবিশ্বাসী হোন: আপনার দক্ষতা ও যোগ্যতার উপর বিশ্বাস রাখুন।
৪. ইন্টারভিউ শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন: একটি মার্জিত সমাপ্তি!
ইন্টারভিউ শেষ হওয়ার পর ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্যদের ধন্যবাদ জানান।
- ধন্যবাদ ইমেইল: ইন্টারভিউয়ের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি ফলো-আপ ইমেইল পাঠিয়ে আবারও ধন্যবাদ জানাতে পারেন। এতে আপনার পেশাদারিত্ব প্রকাশ পাবে।
চাকরির ইন্টারভিউয়ের সাধারণ ভুলগুলো যা এড়িয়ে যাবেন (Common Interview Mistakes to Avoid)
ইন্টারভিউতে কিছু সাধারণ ভুল আছে যা অনেক প্রার্থী করে থাকেন। এগুলো এড়িয়ে চললে আপনার সফলতার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে।
ভুল (Mistake) | কেন এটি ভুল (Why it's a mistake) | কিভাবে এড়াবেন (How to Avoid) |
---|---|---|
১. প্রস্তুতি না নেওয়া | আত্মবিশ্বাসের অভাব, প্রাসঙ্গিক উত্তর দিতে না পারা। | কোম্পানি, পদ এবং নিজের সিভি সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন। সম্ভাব্য প্রশ্ন অনুশীলন করুন। |
২. দেরিতে পৌঁছানো | অপেশাদারিত্ব, ইন্টারভিউয়ারের মূল্যবান সময় নষ্ট করা। | ইন্টারভিউয়ের স্থান ও সময় ভালোভাবে জেনে আগেভাগে রওনা দিন। অন্তত ১৫-২০ মিনিট আগে পৌঁছান। |
৩. নেতিবাচক কথা বলা | পূর্বের বস বা কোম্পানি সম্পর্কে নেতিবাচক কথা আপনার সম্পর্কে খারাপ ধারণা তৈরি করে। | অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে কী শিখেছেন, তা বলুন। কোনো নেতিবাচক বিষয় আলোচনা করবেন না। |
৪. মিথ্যা বলা | ধরা পড়লে আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হবে। | সিভিতে বা ইন্টারভিউতে কোনো মিথ্যা তথ্য দেবেন না। সততা বজায় রাখুন। |
৫. অতিরিক্ত কথা বলা/কম কথা বলা | প্রশ্ন থেকে বিচ্যুত হওয়া বা পর্যাপ্ত তথ্য না দেওয়া। | প্রশ্নের নির্দিষ্ট উত্তর দিন। অপ্রয়োজনীয় কথা পরিহার করুন। |
৬. বেতন নিয়ে প্রথমেই আলোচনা | আপনার মূল উদ্দেশ্য যে শুধু বেতন, এমন ধারণা তৈরি হতে পারে। | প্রথম ইন্টারভিউতে বেতন নিয়ে জোর আলোচনা না করাই ভালো। সুযোগ পেলে আলোচনা করা যেতে পারে। |
৭. দুর্বল বডি ল্যাঙ্গুয়েজ | আত্মবিশ্বাসের অভাব এবং আগ্রহহীনতা প্রকাশ পায়। | চোখে চোখ রেখে কথা বলুন, সোজা হয়ে বসুন এবং ইতিবাচক শরীরী ভাষা বজায় রাখুন। |
৮. প্রশ্ন না করা | কোম্পানির প্রতি আগ্রহের অভাব বোঝায়। | ইন্টারভিউয়ের জন্য ২-৩টি বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন প্রস্তুত রাখুন। |
৯. ফোন চেক করা | মনোযোগের অভাব এবং অপেশাদারিত্ব। | ফোন সাইলেন্ট বা বন্ধ রাখুন। ইন্টারভিউ চলাকালীন ফোন চেক করবেন না। |
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
প্রশ্ন ১: "নিজের সম্পর্কে বলুন" এই প্রশ্নের উত্তর কিভাবে দেব?
উত্তর: এই প্রশ্নটি আপনার জন্য নিজেকে তুলে ধরার একটি দারুণ সুযোগ। সাধারণত, আপনার শিক্ষাজীবন, কাজের অভিজ্ঞতা, অর্জন এবং এই পদের জন্য কেন আপনি উপযুক্ত, তা সংক্ষেপে তুলে ধরুন। খুব বেশি ব্যক্তিগত তথ্য না দিয়ে পেশাগত দিকগুলো তুলে ধরা ভালো। আপনার উত্তরটি যেন সর্বোচ্চ ২-৩ মিনিটের মধ্যে শেষ হয়।
প্রশ্ন ২: ইন্টারভিউতে আমার দুর্বলতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে কী বলব?
উত্তর: দুর্বলতার কথা বলার সময় এমন কিছু বলুন যা আপনার পেশাগত জীবনের খুব বেশি ক্ষতি করবে না এবং বলুন কিভাবে আপনি সেই দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। যেমন: "আমি মাঝে মাঝে অতিরিক্ত খুঁতখুঁতে হয়ে যাই, কিন্তু এখন আমি সময় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছি।" অথবা, "আমি মাঝে মাঝে অতিরিক্ত কাজ নিয়ে ফেলি, যা আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়। এখন আমি কাজগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি।" দুর্বলতা বলার সময় অবশ্যই তার সমাধানও উল্লেখ করবেন।
প্রশ্ন ৩: ইন্টারভিউতে আমাকে প্রশ্ন করার সুযোগ দিলে কী প্রশ্ন করব?
উত্তর: প্রশ্ন করার সুযোগ পেলে অবশ্যই প্রশ্ন করুন। এটি আপনার আগ্রহের প্রমাণ। কিছু বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন হতে পারে:
- "এই পদের জন্য নির্বাচিত ব্যক্তি হিসেবে প্রথম ৯০ দিনের মধ্যে আমার প্রধান কাজগুলো কী হবে?"
- "এই টিমের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী?"
- "কোম্পানির সংস্কৃতি বা কাজের পরিবেশ সম্পর্কে জানতে চাই।"
- "এই পদটি থেকে কিভাবে ক্যারিয়ারে উন্নতি করা যায়?"
এমন প্রশ্ন করবেন না যার উত্তর আপনি কোম্পানির ওয়েবসাইটেই পেতে পারেন।
প্রশ্ন ৪: যদি কোনো প্রশ্নের উত্তর না জানি, তাহলে কী করব?
উত্তর: যদি কোনো প্রশ্নের উত্তর না জানেন, তাহলে মিথ্যা বলবেন না। বিনয়ের সাথে বলুন যে আপনি জানেন না, তবে শিখতে আগ্রহী। যেমন: "দুঃখিত, এই বিষয়টি সম্পর্কে আমার এই মুহূর্তে ধারণা নেই, তবে আমি শিখতে খুবই আগ্রহী এবং দ্রুত এটি শিখে নিতে পারব বলে বিশ্বাস করি।" সততা সবসময়ই প্রশংসিত হয়।
প্রশ্ন ৫: ইন্টারভিউতে পোশাক কেমন হওয়া উচিত?
উত্তর: পোশাক অবশ্যই মার্জিত ও পরিপাটি হওয়া উচিত। ছেলেদের জন্য ফরমাল শার্ট-প্যান্ট, টাই (ঐচ্ছিক) এবং মেয়েদের জন্য সালোয়ার-কামিজ বা শাড়ি/ফরমাল পোশাক। রং হালকা বা নিরপেক্ষ হওয়া ভালো, যেমন সাদা, নীল, ধূসর বা কালো। পোশাক যেন পরিষ্কার ও ইস্ত্রি করা হয় এবং জুতো পালিশ করা থাকে। অতিরিক্ত সাজসজ্জা পরিহার করুন।
প্রশ্ন ৬: ইন্টারভিউয়ের পর কি ফলো-আপ ইমেইল পাঠানো উচিত?
উত্তর: হ্যাঁ, অবশ্যই পাঠানো উচিত। ইন্টারভিউ শেষ হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি ফলো-আপ ইমেইল পাঠিয়ে ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্যদের ধন্যবাদ জানান এবং আবারও আপনার আগ্রহ প্রকাশ করুন। এটি আপনার পেশাদারিত্ব এবং আগ্রহের পরিচয় দেয়। এতে আপনার মনে থাকার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
প্রশ্ন ৭: ইন্টারভিউয়ের আগের রাতে কী করব?
উত্তর: ইন্টারভিউয়ের আগের রাতে পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন। আপনার পোশাক, সিভি, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত রাখুন। ইন্টারভিউয়ের স্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ, মানসিক চাপ না নিয়ে রিল্যাক্স থাকুন। হালকা কিছু দেখে বা শুনে মনকে শান্ত রাখুন।
প্রশ্ন ৮: অনলাইন ইন্টারভিউয়ের জন্য বিশেষ কোনো প্রস্তুতি আছে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, অনলাইন ইন্টারভিউয়ের জন্য কিছু অতিরিক্ত প্রস্তুতি প্রয়োজন।
- ইন্টারনেট সংযোগ: শক্তিশালী ও স্থিতিশীল ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করুন।
- নিরিবিলি পরিবেশ: এমন একটি জায়গা বেছে নিন যেখানে কোনো প্রকার শব্দ বা বিঘ্নতা থাকবে না।
- ল্যাপটপ/কম্পিউটার: ল্যাপটপ বা কম্পিউটারের ব্যাটারি চার্জ করা আছে কিনা, দেখে নিন। সম্ভব হলে চার্জার সংযুক্ত রাখুন।
- ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন: ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা, তা পরীক্ষা করে নিন।
- পোশাক: অনলাইনে হলেও ফরমাল পোশাক পরুন। পেছনে দেয়াল বা পরিপাটি কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড রাখুন।
প্রশ্ন ৯: ইন্টারভিউতে কি হাত মেলাতে হয়?
উত্তর: কোভিড-১৯ পরিস্থিতি এবং কোম্পানির নীতি পদ্ধতির উপর নির্ভর করে এটি ভিন্ন হতে পারে। তবে সাধারণত, ইন্টারভিউ শুরুর আগে অনুমতি নিয়ে ইন্টারভিউয়ারের সাথে দৃঢ়ভাবে হাত মেলাতে পারেন। এটি আপনার আত্মবিশ্বাস এবং বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব প্রকাশ করে। তবে যদি ইন্টারভিউয়ার নিজে থেকে হাত না বাড়ান, তাহলে জোর করে হাত না মেলানোই ভালো।
প্রশ্ন ১০: ইন্টারভিউতে মিথ্যা বলা কি ধরা পড়ে?
উত্তর: হ্যাঁ, মিথ্যা বলা প্রায়শই ধরা পড়ে। অভিজ্ঞ ইন্টারভিউয়াররা মিথ্যা তথ্য সহজেই ধরতে পারেন। যদি আপনি এমন কোনো দক্ষতা বা অভিজ্ঞতা সম্পর্কে মিথ্যা বলেন যা আপনার নেই, তবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত প্রশ্ন করা হলে আপনি ধরা পড়ে যাবেন। এতে আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং আপনি চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়বেন। সবসময় সৎ থাকুন।
শেষ কথা: আপনার স্বপ্ন হাতের মুঠোয়!
চাকরির ইন্টারভিউ ব্যাপারটা শুনতে কঠিন লাগলেও, সঠিক পরিকল্পনা আর আত্মবিশ্বাস থাকলে এটা আপনার জন্য একটা দারুণ অভিজ্ঞতা হতে পারে। মনে রাখবেন, প্রতিটি ইন্টারভিউই এক নতুন শেখার সুযোগ। আজ যে ভুলটা করলেন, কাল সেটা শুধরে নিতে পারবেন।
উপরে দেওয়া টিপসগুলো মেনে চললে আপনার প্রস্তুতি অনেকটাই এগিয়ে যাবে। আর হ্যাঁ, নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন। আপনি পারেন! আপনার যোগ্যতা আর পরিশ্রম আপনাকে সাফল্যের ঠিকানায় পৌঁছে দেবেই। শুভকামনা!