World-Systems Theory: Understanding Global Power Dynamics

প্রাচীন বিশ্ব থেকে আধুনিক বিশ্ব: আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে বিশ্ব-ব্যবস্থা তত্ত্ব

আচ্ছা, কখনো কি মনে হয়েছে, কেন কিছু দেশ এত ধনী আর কিছু দেশ এত গরিব? কেন কিছু দেশ অন্যদের ওপর খবরদারি করে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে আমাদের একটু অন্যরকম একটা চশমা পরতে হবে। সেই চশমার নাম হল বিশ্ব-ব্যবস্থা তত্ত্ব (World-Systems Theory)। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের (International Relations) জটিল ধাঁধা মেলাতে এই তত্ত্বটি একটি দারুণ উপায় হতে পারে, বিশেষ করে আমাদের বাংলাদেশের (Bangladesh) মতো দেশের জন্য। চলুন, দেখা যাক এই তত্ত্ব আমাদের কী কী শেখাতে পারে!

Table of contents

বিশ্ব-ব্যবস্থা তত্ত্ব কী?

বিশ্ব-ব্যবস্থা তত্ত্ব (World-Systems Theory) মূলত একটি কাঠামো, যা বিশ্বকে একটি একক অর্থনীতি হিসেবে দেখে। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, বিশ্বের দেশগুলো একে অপরের সঙ্গে এমনভাবে জড়িত যে, কোনো একটি দেশের পরিবর্তন অন্য দেশের ওপর প্রভাব ফেলে। এই তত্ত্বের মূল কথা হল, বিশ্ব একটি ‘কোর’ (Core), একটি ‘পেরিফেরি’ (Periphery) এবং একটি ‘সেমি-পেরিফেরি’ (Semi-Periphery) অঞ্চলে বিভক্ত।

কোর, পেরিফেরি, আর সেমি-পেরিফেরি: এরা কারা?

  • কোর (Core): এরা হল সেই দেশগুলো, যারা ধনী, শক্তিশালী এবং প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত। তারা পেরিফেরি দেশগুলোকে শোষণ করে। যেমন – আমেরিকা, ইউরোপের দেশগুলো।
  • পেরিফেরি (Periphery): এরা হল গরিব এবং দুর্বল দেশ। কোর দেশগুলো এদের থেকে সস্তায় কাঁচামাল কেনে এবং নিজেদের তৈরি করা জিনিস বেশি দামে বিক্রি করে। যেমন – অনেক আফ্রিকান দেশ।
  • সেমি-পেরিফেরি (Semi-Periphery): এরা মাঝামাঝি অবস্থানে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে কোর দেশগুলোর মতো আচরণ করে, আবার কিছু ক্ষেত্রে পেরিফেরির মতো। যেমন – চীন, ভারত, ব্রাজিল।

বিশ্ব-ব্যবস্থা তত্ত্ব কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

এই তত্ত্ব আমাদের বুঝতে সাহায্য করে, কেন কিছু দেশ উন্নতি করছে আর কিছু দেশ পিছিয়ে আছে। শুধু তাই নয়, এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, রাজনৈতিক সম্পর্ক এবং উন্নয়নের গতিপথ বুঝতেও সাহায্য করে।

কীভাবে কাজ করে এই বিশ্ব-ব্যবস্থা?

ধরুন, বাংলাদেশ (Bangladesh) থেকে তৈরি পোশাক (Ready-Made Garments) ইউরোপের (Europe) বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এখানে বাংলাদেশ হল পেরিফেরি, কারণ আমরা সস্তায় শ্রমিক দিচ্ছি এবং ইউরোপ কোর, কারণ তারা বেশি দামে সেই পোশাক বিক্রি করে লাভ করছে। এই যে অসম বিনিময়, এটাই হল বিশ্ব-ব্যবস্থা তত্ত্বের একটা উদাহরণ।

বিশ্ব-ব্যবস্থা তত্ত্বের মূল উপাদান

  • শ্রমের বিভাজন (Division of Labor): বিশ্বে বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন ধরনের কাজ করে। কিছু দেশ কাঁচামাল উৎপাদন করে, আবার কিছু দেশ সেই কাঁচামাল দিয়ে জিনিস তৈরি করে।
  • পুঁজি সঞ্চয় (Capital Accumulation): কোর দেশগুলো পেরিফেরি থেকে শোষণ করে প্রচুর পরিমাণে পুঁজি জমা করে।
  • রাষ্ট্রের ভূমিকা (Role of the State): প্রতিটি দেশের সরকার তাদের নিজেদের অর্থনীতিকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। কোর দেশগুলো তাদের নিজেদের কোম্পানিগুলোকে সাহায্য করে, যাতে তারা আরও শক্তিশালী হতে পারে।

বিশ্ব-ব্যবস্থা তত্ত্ব: কিছু জরুরি প্রশ্ন (FAQs)

বিশ্ব-ব্যবস্থা তত্ত্ব নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্ন প্রায়ই আমাদের মনে আসে। চলুন, সেগুলোর উত্তর খুঁজে বের করি:

বিশ্ব-ব্যবস্থা তত্ত্বের জনক কে? (Who is the father of the World-Systems Theory?)

ইমানুয়েল ওয়ালারস্টেইন (Immanuel Wallerstein) হলেন বিশ্ব-ব্যবস্থা তত্ত্বের জনক। তিনি এই তত্ত্বের মাধ্যমে দেখিয়েছেন, কীভাবে পুঁজিবাদী বিশ্ব অর্থনীতি (Capitalist World Economy) বিভিন্ন দেশকে শোষণ করে।

বিশ্ব-ব্যবস্থা তত্ত্বের মূল ধারণা কী? (What is the main idea of World-Systems Theory?)

এই তত্ত্বের মূল ধারণা হল বিশ্ব একটি একক পুঁজিবাদী অর্থনীতি, যেখানে কোর, পেরিফেরি এবং সেমি-পেরিফেরি অঞ্চলের মধ্যে অসম সম্পর্ক বিদ্যমান।

Enhanced Content Image

কোর-পেরিফেরি সম্পর্ক কী? (What is the core-periphery relationship?)

কোর দেশগুলো পেরিফেরি দেশগুলো থেকে সস্তায় কাঁচামাল ও শ্রমিক শোষণ করে। এর ফলে কোর দেশগুলো ধনী হয়, আর পেরিফেরি দেশগুলো গরিব থেকে যায়।

কীভাবে একটি দেশ কোর হতে পারে? (How can a country become a core?)

একটি দেশ উন্নত প্রযুক্তি, শক্তিশালী অর্থনীতি, এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মাধ্যমে কোর-এ উন্নীত হতে পারে। শিক্ষা, বিজ্ঞান, এবং প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ এক্ষেত্রে খুব জরুরি।

বিশ্ব-ব্যবস্থা তত্ত্বের দুর্বলতাগুলো কী কী? (What are the weaknesses of the World-Systems Theory?)

এই তত্ত্বের কিছু দুর্বলতাও আছে। সমালোচকদের মতে, এটি সংস্কৃতি এবং স্থানীয় রাজনীতিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয় না। এছাড়া, এটি সবসময় পরিবর্তনশীল বিশ্বকে ব্যাখ্যা করতে পারে না।

বাংলাদেশের জন্য বিশ্ব-ব্যবস্থা তত্ত্বের শিক্ষা

বাংলাদেশের (Bangladesh) মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য এই তত্ত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কীভাবে নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করতে পারি, সেই বিষয়ে এটি আমাদের পথ দেখাতে পারে।

কীভাবে আমরা পেরিফেরি থেকে সেমি-পের peripheral যেতে পারি?

  • শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ: উন্নত শিক্ষা এবং প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে পারে।
  • শিল্পের উন্নয়ন: শুধু পোশাক শিল্পের ওপর নির্ভর না করে, অন্যান্য শিল্পেও মনোযোগ দিতে হবে।
  • আঞ্চলিক সহযোগিতা: প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে হবে।

টেবিল: বাংলাদেশ এবং বিশ্ব-ব্যবস্থা তত্ত্ব

বিষয় বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা উন্নতির সুযোগ
অর্থনীতি পোশাক শিল্পের ওপর নির্ভরশীল বহুমুখী শিল্প তৈরি করা, প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো
শিক্ষা শিক্ষার হার বাড়ছে, তবে গুণগত মান উন্নয়ন দরকার গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D) খাতে বেশি মনোযোগ দেওয়া
প্রযুক্তি তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উন্নতি হচ্ছে, তবে আরও অনেক দূর যেতে হবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) ও অন্যান্য আধুনিক প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করা
আঞ্চলিক সম্পর্ক প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো, তবে বাণিজ্য আরও বাড়াতে হবে কানেক্টিভিটি বাড়ানো, বাণিজ্য চুক্তি করা
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা উন্নয়নের জন্য জরুরি সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা, দুর্নীতি কমানো

বিশ্ব-ব্যবস্থা তত্ত্ব: কিছু মজার উদাহরণ

ধরুন, আপনি একটি কফি শপে (Coffee Shop) কফি খাচ্ছেন। কফি আসে ব্রাজিল (Brazil) থেকে, চিনি আসে কিউবা (Cuba) থেকে, আর কাপটি সম্ভবত চীনে (China) তৈরি। এই কফি শপটি একটি ছোট বিশ্ব, যেখানে প্রতিটি দেশের অবদান আছে।

আরেকটা উদাহরণ দেই। আপনার স্মার্টফোনটি (Smartphone) হয়তো আমেরিকা (America) বা কোরিয়ায় (Korea) ডিজাইন করা, কিন্তু এর যন্ত্রাংশগুলো আসে বিভিন্ন দেশ থেকে, আর এটি তৈরি হয় চীনে (China)। তার মানে, একটি ফোনের পেছনেও পুরো বিশ্বের অবদান রয়েছে।

উপসংহার: পরিবর্তনের পথে বাংলাদেশ

বিশ্ব-ব্যবস্থা তত্ত্ব (World-Systems Theory) আমাদের চোখ খুলে দেয়। এটি বুঝতে সাহায্য করে, কীভাবে বিশ্ব অর্থনীতি আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করে। বাংলাদেশের (Bangladesh) জন্য এই তত্ত্ব একটি দিকনির্দেশনা হতে পারে। আমরা যদি নিজেদের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করতে পারি এবং সঠিক পথে হাঁটতে পারি, তাহলে পেরিফেরি (Periphery) থেকে সেমি-পেরিফেরিতে (Semi-Periphery) উন্নীত হওয়া সম্ভব।

তাহলে, আপনি কী ভাবছেন? এই তত্ত্ব নিয়ে আপনার মতামত কী? আমাদের কমেন্ট করে জানান! আর যদি এই লেখাটি ভালো লাগে, তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। একসাথে, আমরা আমাদের দেশকে আরও উন্নত করতে পারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *