সার্টিফিকেটের নাম সংশোধন (ঘরে বসেই সংশোধন করুন ( A to Z)

জীবনে এমন কিছু মুহূর্ত আসে, যখন মনে হয় – “ইশ! যদি সার্টিফিকেটটা একটু ঠিক করা যেত!” 😩 নামের ভুল, জন্ম তারিখের গরমিল – এইগুলো যেন এক একটা ছোটখাটো যন্ত্রণা। কিন্তু চিন্তা নেই! 😌 এখন ঘরে বসেই সার্টিফিকেটের নাম সংশোধন করা সম্ভব। A থেকে Z পর্যন্ত সবকিছু বুঝিয়ে বলব, যাতে আপনি নিজেই নিজের কাজটা গুছিয়ে নিতে পারেন।

Table of contents

সার্টিফিকেটের নাম সংশোধনের সহজ উপায় (A to Z)

একটা সময় ছিল যখন সার্টিফিকেটের সামান্য ভুল সংশোধন করার জন্য দিনের পর দিন বিভিন্ন অফিসে ঘোরাঘুরি করতে হতো। 😓 কিন্তু এখন? এখন সময়টা অন্যরকম। ডিজিটাল বাংলাদেশ 🇧🇩-এর কল্যাণে অনেক কাজই ঘরে বসে অনলাইনে করা যাচ্ছে। তাহলে চলুন, দেখে নেওয়া যাক কী কী ধাপ অনুসরণ করতে হবে।

প্রথম ধাপ: হলফনামা (Affidavit) তৈরি করা

নাম বা জন্মতারিখের ভুল সংশোধনের প্রথম ধাপ হলো আইনজীবীর (Lawyer) মাধ্যমে নোটারি বা হলফনামা তৈরি করা।

হলফনামা কেন প্রয়োজন?

হলফনামা হলো একটি আইনি ঘোষণা, যা প্রমাণ করে যে আপনি আপনার সার্টিফিকেটের তথ্য পরিবর্তন করতে চান এবং এর জন্য আপনি নিজেই দায়ী।

কোথায় পাবেন?

যেকোনো আইনজীবীর চেম্বারে গিয়ে আপনি এই হলফনামা তৈরি করতে পারবেন।

কত খরচ?

নোটারি পাবলিক করতে ৫০০ টাকার মতো খরচ হতে পারে (কম বেশি লাগতে পারে)।

দ্বিতীয় ধাপ: পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া

হলফনামা সম্পাদনের পর, আপনাকে একটি দৈনিক পত্রিকায় (Newspaper) বিজ্ঞাপন দিতে হবে।

কেন বিজ্ঞাপন দিতে হবে?

পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো, সর্বসাধারণকে জানানো যে আপনি আপনার সার্টিফিকেটের তথ্য সংশোধন করতে যাচ্ছেন। যদি কারো কোনো আপত্তি থাকে, তবে তারা যেন জানাতে পারে।

বিজ্ঞাপনে কী কী তথ্য দিতে হবে?

বিজ্ঞাপনে আপনার সার্টিফিকেটের নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম, শাখা, পরীক্ষার সাল, পরীক্ষাকেন্দ্রের নাম, রোল নম্বর, বোর্ডের নাম এবং জন্মতারিখ উল্লেখ করতে হবে। পাশাপাশি, আপনি কী সংশোধন করতে চান, তা সংক্ষেপে উল্লেখ করতে হবে।

কত খরচ?

পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে ৩০০ টাকার মতো খরচ হবে।

তৃতীয় ধাপ: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাহায্য নেওয়া

এই ধাপে আপনার সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (School/College) সাহায্য লাগবে, যেখানে আপনি লেখাপড়া করেছেন।

কেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাহায্য প্রয়োজন?

অনলাইন আবেদনের ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের EIIN (ইআইআইএন) ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়, যা আপনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই সরবরাহ করতে পারবে।

কীভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাহায্য পাবেন?

  • আপনার হলফনামা এবং পত্রিকায় দেওয়া বিজ্ঞাপনের কপি নিয়ে সরাসরি আপনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যান।
  • সেখানে গিয়ে প্রধান শিক্ষক বা সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের সাথে কথা বলুন।
  • তাদেরকে আপনার সমস্যার কথা খুলে বলুন এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা চান।

চতুর্থ ধাপ: অনলাইনে আবেদন করা

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহায়তায় এবার আসল কাজ – অনলাইনে আবেদন করা।

কীভাবে আবেদন করবেন?

  • আপনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার অপারেটরকে আপনার ডকুমেন্ট স্ক্যান করে অনলাইনে আবেদন করার জন্য অনুরোধ করুন।
  • আবেদনের পর, আপনার ফোনে একটি মেসেজ আসবে।
  • এরপর সোনালী ব্যাংকে (Sonali Bank) আবেদন ফি জমা দেওয়ার জন্য একটি রশিদ দেওয়া হবে।

আবেদন ফি কত?

প্রতিটি সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন ফি ৫২৮ টাকা। (এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি)

কোথায় লগইন করবেন?

আবেদন করার পর, আপনাকে একটি প্রোফাইল তৈরি করতে হবে। এই লিংকে গিয়ে লগইন করতে পারেন: https://efile.dhakaeducationboard.gov.bd/index.php/name/lastupdate

পঞ্চম ধাপ: অপেক্ষা এবং নিয়মিত খোঁজ রাখা

আবেদন করার পর একটু ধৈর্য ধরতে হবে। সাধারণত, আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে ২-৩ মাস বা তার বেশি সময় লাগতে পারে।

কীভাবে খোঁজ রাখবেন?

আপনার প্রোফাইলে লগইন করে নিয়মিত আপডেটের জন্য চোখ রাখুন।

ষষ্ঠ ধাপ: ডকুমেন্টস উত্তোলন

যখন আপনার আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে, তখন আপনার ফোনে একটি মেসেজ আসবে। এরপর আপনি আপনার প্রোফাইলে লগইন করে "ডকুমেন্ট উত্তোলন" (Document Uttolon) অপশনে গিয়ে আবেদন করতে পারবেন।

উত্তোলন ফি কত?

ডকুমেন্ট উত্তোলনের জন্য ৫৫৮ টাকা সোনালী ব্যাংকে জমা দিতে হবে।

সপ্তম ধাপ: শিক্ষাবোর্ডে যাওয়া

এই ধাপে আপনাকে প্রথমবারের মতো শিক্ষাবোর্ডে যেতে হবে।

শিক্ষাবোর্ডে কী করতে হবে?

  • আপনার অরিজিনাল সার্টিফিকেট জমা দিন।
  • পরের দিন, চূড়ান্ত ডকুমেন্টস এবং ব্যাংকে ফি জমা দেওয়ার মূল কপি জমা দিয়ে আপনার নতুন সংশোধিত সার্টিফিকেট বুঝে নিন।

কিছু জরুরি তথ্য ও টিপস

  • পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে ১৪৩ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তাই ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন।
  • আবেদন ফি জমা দেওয়ার রশিদ অবশ্যই যত্ন করে রাখুন।
  • যদি আপনার নিজের নাম সংশোধন করতে হয় এবং আপনার বয়স ১৮ বছরের বেশি হয়, তাহলে আপনি নিজেই হলফনামা করতে পারবেন।
  • যদি আপনার বয়স ১৮ বছরের কম হয় বা আপনি আপনার বাবা-মায়ের নাম সংশোধন করতে চান, তাহলে আপনার বাবা কর্তৃক প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট বা নোটারি পাবলিকের কাছ থেকে হলফনামা করতে হবে।
  • অনলাইনে আবেদন করার সময়, সকল তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করুন। কোনো ভুল তথ্য দিলে আপনার আবেদন বাতিল হতে পারে।
  • নিয়মিত আপনার প্রোফাইল চেক করুন এবং শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইটে দেওয়া নোটিশগুলো অনুসরণ করুন।
  • যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলে সরাসরি শিক্ষাবোর্ডের হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করুন।

নাম সংশোধনে প্রায়শই জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্ন (FAQ)

  • প্রশ্ন: সার্টিফিকেটের নাম সংশোধনের জন্য কী কী ডকুমেন্টস লাগবে?

উঃ হলফনামা, পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের কপি, আপনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেওয়া ডকুমেন্টস, আপনার রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র/ জন্ম সনদ, এবং সোনালী ব্যাংকে ফি জমা দেওয়ার রশিদ।

  • প্রশ্ন: আমি কি নিজেই অনলাইনে আবেদন করতে পারব?

উঃ যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের EIIN ও পাসওয়ার্ড প্রয়োজন হয়, তাই সরাসরি নিজে থেকে আবেদন করা কঠিন। তবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহায়তায় আপনি অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।

  • প্রশ্ন: সার্টিফিকেটের নাম সংশোধন করতে কত দিন লাগে?

উঃ সাধারণত, ২-৩ মাস বা তার বেশি সময় লাগতে পারে।

  • প্রশ্ন: সার্টিফিকেটের নাম সংশোধনের জন্য কত টাকা খরচ হয়?

উঃ হলফনামা (৫০০ টাকা), পত্রিকায় বিজ্ঞাপন (৩০০ টাকা), আবেদন ফি (১১১৬ টাকা), এবং সার্টিফিকেট উত্তোলন ফি (১১১৬ টাকা) সহ মোট প্রায় ৩০০০-৩৫০০ টাকা খরচ হতে পারে। এছাড়াও, যাতায়াত খরচ তো আছেই।

  • প্রশ্ন: আমি যদি শিক্ষাবোর্ডে যেতে না পারি, তাহলে কী হবে?

উঃ সেক্ষেত্রে, আপনি আপনার পরিচিত কাউকে দিয়ে আপনার ডকুমেন্টস জমা দিতে এবং সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন। তবে, এর জন্য আপনাকে একটি অথরাইজেশন লেটার দিতে হবে।

এক নজরে খরচ হিসাব

বিষয় আনুমানিক খরচ (টাকা)
পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ৩০০
নোটারি পাবলিক ৫০০
আবেদন ফি (৫৫৮x২) ১১১৬
সার্টিফিকেট উত্তোলন ফি (৫৫৮x২) ১১১৬
অন্যান্য খরচ (যাতায়াত) ৫০০
মোট ৩৪৩২

শেষ কথা

জীবনটা সহজ নয়, কিন্তু কিছু কাজ সহজ করে নেওয়ার সুযোগ আমাদের হাতেই থাকে। সার্টিফিকেটের নাম সংশোধন তার মধ্যে একটি। আশা করি, এই ব্লগ পোস্টটি আপনাকে সার্টিফিকেটের নাম সংশোধনের পুরো প্রক্রিয়াটি বুঝতে সাহায্য করেছে। যদি কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে নির্দ্বিধায় কমেন্ট বক্সে জিজ্ঞাসা করুন। আপনার যাত্রা শুভ হোক! 😊

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *