আজ আমরা ঘুরে বেড়াবো বাংলাদেশের কিছু মন ভালো করা পার্কে!
আপনি কি একটু সবুজের ছোঁয়া, একটু খোলা বাতাস আর একরাশ আনন্দ খুঁজে বেড়াচ্ছেন? তাহলে আজকের লেখাটি আপনার জন্য! ইট-কাঠের শহরে হাঁপিয়ে ওঠা মনকে শান্তি দিতে বাংলাদেশে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য সুন্দর পার্ক। কোনোটা ঐতিহ্যের সাক্ষী, কোনোটা আবার আধুনিক বিনোদনের ঠিকানা। চলুন, আজ আমরা বাংলাদেশের সেরা কয়েকটি পার্কের সন্ধান করি।
ঢাকার সেরা কিছু পার্ক
ঢাকা, আমাদের প্রাণের শহর। এই শহরের ভেতরেও কিন্তু লুকিয়ে আছে অনেক সবুজ উদ্যান। যেখানে আপনি ক্লান্তি ভুলে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে পারেন।
রমনা পার্ক: ঐতিহ্যের সবুজ ছোঁয়া
রমনা পার্ক ঢাকার অন্যতম প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী একটি পার্ক। প্রায় ৬৮.৫ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই পার্কটি শুধু সবুজে ঘেরা নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাসের নানা গল্প।
রমনা পার্কের বিশেষত্ব
- এখানে আছে বিভিন্ন ধরনের গাছপালা, যা পার্কটিকে দিয়েছে এক নয়নাভিরাম রূপ।
- ভোরে এবং সন্ধ্যায় প্রাতঃভ্রমণকারীদের ভিড় দেখা যায়।
- পুকুর আর ফুলের বাগান রমনা পার্কের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
- বৈশাখী মেলা সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে রমনা পার্কের গুরুত্ব অনেক।
বোটানিক্যাল গার্ডেন: প্রকৃতির পাঠশালা
মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান বা বোটানিক্যাল গার্ডেন শুধু একটি পার্ক নয়, এটি যেন প্রকৃতির এক বিশাল পাঠশালা। প্রায় ২০৮ একর জায়গা জুড়ে তৈরি এই গার্ডেনে আপনি খুঁজে পাবেন দেশ-বিদেশের নানান প্রজাতির গাছপালা।
বোটানিক্যাল গার্ডেনে যা দেখবেন
- এখানে আছে গোলাপ বাগান, পদ্ম পুকুর এবং বিভিন্ন ঔষধি গাছের সংগ্রহ।
- বিরল প্রজাতির গাছপালা দেখতে জীববিজ্ঞান এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা প্রায়ই এখানে আসেন।
- পরিবার নিয়ে একটি সুন্দর দিন কাটানোর জন্য এটি একটি অসাধারণ জায়গা।
চন্দ্রিমা উদ্যান: নীরবতার সুর
চন্দ্রিমা উদ্যান, যা আগে লুই আই কানের নকশায় তৈরি করা হয়েছিল, ঢাকার একটি অন্যতম পরিচিত স্থান। এটি মূলত জিয়াউর রহমান-এর সমাধি কমপ্লেক্স। এখানে সবুজ ঘাস আর ফুলের বাগান আপনাকে দেবে শান্তি।
চন্দ্রিমা উদ্যানের আকর্ষণ
- এখানে একটি ঝুলন্ত সেতু আছে, যা উদ্যানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে।
- লেকটির পাড়ে বসে অনেক মানুষ প্রকৃতির নীরবতা উপভোগ করেন।
- এই উদ্যানটি নীরব এবং শান্ত হওয়ায় অনেক মানুষ এখানে ধ্যান করতে আসেন।
ঢাকার বাইরের কিছু জনপ্রিয় পার্ক
ঢাকার বাইরেও বাংলাদেশে অনেক সুন্দর পার্ক আছে, যা আপনার ভ্রমণ তালিকায় যোগ হতে পারে।
ভাটিয়ারী গলফ অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাব, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম শহরের কাছে ভাটিয়ারীতে পাহাড় আর লেকের মেলবন্ধনে গড়ে উঠেছে ভাটিয়ারী গলফ অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাব। এটি শুধু গলফ খেলার জায়গা নয়, এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনেক পর্যটকের কাছে প্রিয় গন্তব্য।
ভাটিয়ারীর বিশেষত্ব
- পাহাড়ের উপরে সবুজের মাঝে গলফ খেলার অভিজ্ঞতা এখানে অসাধারণ।
- এখানে একটি সুন্দর লেক আছে, যেখানে বোটিং করার সুযোগ রয়েছে।
- এখানে অনেক রিসোর্ট ও কটেজ আছে, যেখানে আপনি বিশ্রাম করতে পারবেন।
নিসর্গ নীরব ইকো রিসোর্ট, সিলেট
সিলেটের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের কাছে অবস্থিত নিসর্গ নীরব ইকো রিসোর্ট একটি অসাধারণ জায়গা। এটি মূলত একটি প্রকৃতি-বান্ধব রিসোর্ট, যা পর্যটকদের কাছে খুব জনপ্রিয়।
নিসর্গ নীরবের আকর্ষণ
- চারপাশে সবুজ বন আর পাখির কলরব, যা মনকে শান্তি এনে দেয়।
- এখানে থাকার জন্য কটেজ এবং কটেজের সামনে সুন্দর বাগান রয়েছে।
- আপনি চাইলে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ঘুরে আসতে পারেন।
ড্রিম হলিডে পার্ক, নরসিংদী
ঢাকা থেকে কাছেই নরসিংদীতে অবস্থিত ড্রিম হলিডে পার্ক একটি জনপ্রিয় বিনোদন কেন্দ্র। এখানে বিভিন্ন রাইড এবং খেলার ব্যবস্থা আছে, যা সব বয়সের মানুষের জন্য উপভোগ্য।
ড্রিম হলিডে পার্কের বিশেষত্ব
- এখানে বিভিন্ন রোমাঞ্চকর রাইড আছে, যেমন রোলার কোস্টার এবং বাম্পার কার।
- পার্কে একটি ওয়াটার ওয়ার্ল্ড আছে, যেখানে আপনি জলকেলিতে আনন্দ করতে পারবেন।
- সুন্দর সাজানো বাগান এবং ফোয়ারা পার্কটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
শিশু পার্ক: ছোটদের আনন্দ ভুবন
শিশুদের জন্য ঢাকায় বেশ কয়েকটি শিশু পার্ক রয়েছে, যেখানে তারা আনন্দে সময় কাটাতে পারে।
শিশু একাডেমী পার্ক
বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই পার্কটি শিশুদের জন্য একটি চমৎকার স্থান। এখানে বিভিন্ন রাইড এবং খেলার উপকরণ রয়েছে।
জাতীয় শিশু পার্ক
এটি শাহবাগে অবস্থিত। এখানে শিশুরা বিভিন্ন রাইডে চড়ে আনন্দ পায় এবং এটি তাদের বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র।
পার্ক বিষয়ক কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)
এখন আমরা পার্ক নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর জানবো, যা আপনার জন্য দরকারি হতে পারে।
ঢাকার পার্কগুলো কখন খোলা থাকে?
ঢাকার পার্কগুলো সাধারণত সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে, কিছু পার্কের সময়সূচি ভিন্ন হতে পারে। রমনা পার্ক এবং বোটানিক্যাল গার্ডেন সাধারণত এই সময় ধরেই খোলা থাকে।
পার্কগুলোতে প্রবেশ ফি কত?
বেশিরভাগ পার্কে প্রবেশ ফি লাগে না, তবে কিছু পার্কে সামান্য ফি নেওয়া হয়। যেমন, বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রবেশ করতে ২০ টাকা লাগে। শিশু পার্কগুলোতে রাইডের জন্য আলাদা টিকেট কাটতে হয়।
পার্কগুলোতে কী কী সুবিধা পাওয়া যায়?
পার্কগুলোতে সাধারণত বসার স্থান, হাঁটার পথ, ফুলের বাগান এবং ছোটখাটো খাবারের দোকান থাকে। কিছু পার্কে শিশুদের খেলার জন্য আলাদা জায়গা এবং রাইডও থাকে। রমনা পার্কের মতো বড় পার্কগুলোতে পাবলিক টয়লেট এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে।
ঢাকার আশেপাশে ঘোরার মত পার্ক কোনগুলো?
ঢাকার আশেপাশে ঘোরার মত অনেক পার্ক আছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নরসিংদীর ড্রিম হলিডে পার্ক, গাজীপুরের নন্দন পার্ক এবং বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। এছাড়া, পুবাইলে অবস্থিত বিভিন্ন resort-গুলোতেও সুন্দর পার্ক এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করা যায়।
ফ্যামিলি পার্কগুলোর মধ্যে কোনগুলো ভালো?
ফ্যামিলি পার্কগুলোর মধ্যে বোটানিক্যাল গার্ডেন, রমনা পার্ক এবং চন্দ্রিমা উদ্যান অন্যতম। এছাড়া, ঢাকার বাইরে ড্রিম হলিডে পার্ক এবং নিসর্গ নীরব ইকো রিসোর্টও ফ্যামিলি পার্ক হিসেবে খুব জনপ্রিয়। এই পার্কগুলোতে পরিবারের সবাই একসাথে আনন্দ করার অনেক সুযোগ রয়েছে।
পার্কের পরিবেশ রক্ষায় আমাদের দায়িত্ব
আমরা যখন পার্কে ঘুরতে যাই, তখন পার্কের পরিবেশ রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। কিছু ছোট পদক্ষেপের মাধ্যমে আমরা পার্কগুলোকে পরিষ্কার এবং সবুজ রাখতে পারি।
- পার্কে যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন।
- গাছপালা এবং ফুলের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকুন।
- প্লাস্টিক ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশ-বান্ধব জিনিস ব্যবহার করুন।
- অন্যদেরকেও পার্কের পরিবেশ রক্ষায় উৎসাহিত করুন।
শেষ কথা
সবুজের সমারোহে ঘেরা বাংলাদেশের এই পার্কগুলো যেন এক একটা শান্তির নীড়। ব্যস্ত শহরের মাঝে একটুখানি মুক্তির স্বাদ পেতে এই পার্কগুলোর বিকল্প নেই। তাহলে আর দেরি কেন, আজই ঘুরে আসুন আপনার পছন্দের পার্কে আর Refresh হয়ে যান!